স্টাফ রিপোর্টার ভোলা প্রকাশঃ
ভোলায় ক্ষমতার অপব্যাবহার ও অর্থের বিনিময়ে অন্যের জমি অবৈধভাবে নামজারি রেকর্ড করে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের মো. আমির হোসেনের ছেলে মো. ইকবাল হোসেন ও মো. জাহিদ হোসেনের বিরেুদ্ধে। ইকবাল ও জাহিদ পুলিশ এবং সেনা সদস্য হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই এলাকার মোস্তাফিজ পন্ডিতের প্রবাসী ছেলে মো. নুরে আলম মনিরের কষ্টের টাকায় কেনা জমি অবৈধভাবে রেকর্ড করে নিয়ে জোরপূর্বক দখল করার পায়তারা করছেন। নিজের কেনা জমি অবৈধভাবে রেকর্ড করে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে নুরে আলম মনির প্রবাসেই স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা বাবা মোস্তাফিজ পন্ডিত। পুলিশ ও সেনা সদস্য দুই ভাই মোস্তাফিজকে ওই জমিতে না যেতে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এতে চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মোস্তাফিজ। অবৈধ রেকর্ড বাতিল ও প্রবাসীর ছেলে মনিরের কষ্টের টাকায় কেনা সম্পত্তি উদ্ধারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বৃদ্ধ মোস্তাফিজ।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ভোলা সদরের আলীনগর ইউনিয়নের মোস্তাফিজ পন্ডিত তার প্রবাসী ছেলে নুরে আলম মনিরের পাঠানো টাকা দিয়ে ২০১৭ সালে স্থানীয় রুপিয়া বেগমের কাছ থেকে রুহিতা মৌজার এসএ ৩৪৩ খতিয়ানের ১২২৫ ও ১২২৬ দাগের হাল ২৭১৩ দাগের বাগানের সাড়ে ৮৪ শতাংশ জমি ২৮ লাখ আট হাজার টাকায় ক্রয় করেন। জমি কেনার পর মোস্তাফিজ রেজিস্ট্রী দলিল অনুযায়ী নামজারী (রেকর্ড) করান এবং উক্ত জমি ভোগদখল করে আসছেন। একই মালিক রুপিয়া বেগমের কাছ থেকে পার্শ্ববর্তী আমির হোসেন তার ছেলে সেনা সদস্য জাহিদ, পুলিশ সদস্য ইকবালের নামে ২০১৭ সালে একই মৌজার এসএ ১৫৯/১ খতিয়ানের ১১৯৬, ১২২৮, ১২২৯, ১২৩০ ও ১২৩৫ দাগের এক একর সাড়ে ৬ শতাংশ জমি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। এর মধ্যে নালে জমি রয়েছে এক একর, বাড়ী রয়েছে সোয়া ৬ শতাংশ ও বাগান রয়েছে ও ০.০২৫ শতাংশ। জমি ক্রয়ের পর থেকে দলিলে উল্লেখিত ভোগদখল অনুযায়ী ১১৯৬, ১২২৯ ও ১২৩০ দাগে ভোগ দখল করিতেছেন। সে অনুযায়ী ২০১৭ সালে তাদের নামে নামজারি করিয়েছেন।
কিন্তু আমির হোসেন ২০১৯ সালে মোস্তাফিজের ছেলের নামে ক্রয় করা জমির নামজারি রেকর্ডের বিরুদ্ধে ভূমি অফিসে মামলা করেন। ওই মামলা পরপর দুইবার মোস্তাফিজের ছেলে নুরে আলম মনিরের পক্ষে রায় হয়। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত ক্ষমতার কারণে ৩য় বার রায় তাদের বিপক্ষে চলে যায়। রায় অনুযায়ী ২০১৯ সালে মোস্তাফিজের ছেলের ৩৬ শতাংশ জমি আমির হোসেনের ছেলেদের নামে রেকর্ড করে নেয়। এর কিছুদিন পর আমির হোসেনসহ তার ছেলে সেনা সদস্য জাহিদ ও পুলিশ সদস্য ইকবাল জোরপূর্বক মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলের ক্রয়কৃত ভোগদখলীয় জমিতে প্রবেশ করে গাছের সুপারী পেরে নিয়ে যায়। মোস্তাফিজ তাদের বাগানের সুপারি নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে আমির হোসেনকে জিজ্ঞেস করলে আমির হোসেন ওই জমি তাদের নামে রেকর্ড হয়েছে বলে জানায়। এর পর থেকে বেশ কয়েকবার অবৈধ রেকর্ডের বলে ওই জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমির হোসেন। এবং মোস্তাফিজকে ওই জমির কাছে যেতে নিষেধ করেন। জমিতে প্রবেশ করলে মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রাণনাশের ও হুমকি দেয় আমির হোসেন ও তার দুই ছেলে পুলিশ সদস্য মো. ইকবাল ও সেনা সদস্য মো. জাহিদ।
ভুক্তভোগী মোস্তাফিজ পন্ডিত আরো জানান, তার ছেলে নুরে আলম মনির প্রবাসে থেকে অনেক কষ্ট করে টাকা পাঠিয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে জমি কিনে দীর্ঘদিন ভোগদখলে আছেন তারা। হঠাৎ করে আমির হোসেন তার ছেলেদের নামে ওই জমি রেকর্ড করে জোরপূর্বক দখলে নিতে চাচ্ছেন। তারা বাগানের সুপারীসহ গাছগাছালী কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমির হোসেনের ছেলে পুলিশ সদস্য মো. ইকবাল ও সেনা সদস্য মো. জাহিদ সরকারি চাকরি করার সুবাদে মেস্তাফিজকে মেরে ফেলার হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। তাদের এ সকল জাল জালিয়াতির কারণে মোস্তাফিজের প্রবাসী ছেলে নুরে আলম মনির স্ট্রোক করে মারা যান। এমনকি গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) মোস্তাফিজ বাড়ীর কাছে দোকানের সামনে গেলে আমির হোসেন ও জাহিদ তাকে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি ওই জমির কাছে গেলে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। তিনি এখন ওদের ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তিনি যাতে তার প্রবাসী ছেলের কষ্টের টাকায় কেনা জমি ভোগদখল করতে পারেন সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আমির হোসেন জানান, তিনি ও মোস্তাফিজ পন্ডিত একই মালিকের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন। মোস্তাফিজুর রহমানই মধ্যস্ততা করে তাকে ওই জমি কিনে দিয়েছেন। তিনি তার দুই ছেলের নামে ওই জমি কিনেছেন। তাদেরকে বিল দিয়ে জমি দখল দিয়েছেন। ওই জমি মোস্তাফিজ লগ্নি লাগিয়ে তাকে টাকা এনে দিতো। হঠাৎ শুনতে পেয়েছি আমি যে মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছি তার বিলের দাগে জমি কম। তাই বাগানের দাগ অনুযায়ী রেকর্ড করে জমি ভোগদখল করেছি। আমরা মোস্তাফিজুর রহমানের কোন জমি দখল করেনি এবং আমি ও আমার ছেলেরা মোস্তাফিজুরকে কোন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাইনি। কিভাবে নামজারি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি।
আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বশির আহমেদ বলেন, এরকম কোন কিছু আমি শুনতে পাইনি। কেউ এ ব্যাপারে আমার কাছে আসেনি। যদি কেউ অভিযোগ নিয়ে আসে তাহলে বিষয়টি দেখবো।