মোঃ সাইফুল ইসলাম আকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক,ভোলা
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১৩৯তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচ-এফপি) ডাঃ মোঃ মাসুম এর একমাত্র কন্যা সুবাহ বিনতে মাসুম।
এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় সুবাহ পেয়েছেন ৮১,তার মেরিট স্কোর ২৮১,তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ঢাকা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ।
জানা গেছে,সুবাহ বিনতে মাসুম একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান।ডাক্তার বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি।ছোটবেলা থেকে সুবাহার মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে তার বাবা ডাক্তার মাসুমের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।সুবাহ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী,সাহসী আর পরিশ্রমী। অদম্য সেই সুবাহ এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
সুবাহার বাবা মো.মাসুম পেশায় একজন চিকিৎসকও মা গৃহিনী।বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সুবাহ নিজেই,তার আর কোন আপন ভাই-বোন নেই।
সুবাহ ২০১৪ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন,২০২০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন এবং ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ও জিপিএ-৫ পান তিনি।
এ ছাড়া সুবাহ শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন।
সুবাহার পৈত্রিক নিবাস ঢাকা হলে বাবার কর্মস্থল সুবাধে তিনি বোরহানউদ্দিনের মেয়ে হিসেবেই সকলের নিকট পরিচিত।
এদিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে একমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী সুবাহার পরিবার,তার নিজ গ্রামসহ উপজেলায় বইছে আনন্দের বন্যা। সুবাহ বলেন, ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বাবার মতো ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ বোরহানউদ্দিন উপজেলার দরিদ্র-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন,আমার বাবা ডাক্তার হয়ে যেভাবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন আমি ও আমার বাবার মতো মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।
তিনি বলেন,আমার এই সাফল্য ও ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা সহ শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম।
মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদেই ফেলেন সুবাহার মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,আমাদের একমাত্র মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে।আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
সুবাহার বাবা ডাক্তার মোঃ মাসুম বলেন, ছোটবেলা থেকেই সুবাহ লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী।অবশেষে আমাদের পরিবারের সবার প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি তার নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
আমি ডাক্তার হওয়ার পর থেকেই সাধারণ অসহায়-দুস্থ মানুষের চিকিৎসা বিনা পয়সাই করে যাচ্ছি,মানুষের সেবায় সবসময়ই নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পছন্দ করি।
তাই আমার মেয়েকে ছোট বেলা থেকেই চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত রাখার স্বপ্ন দেখেছি সকলের দেওয়ায় আজ আমার স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত হয়েছে,একমাত্র মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও চান তিনি।
এদিকে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় সুবাহকে সোমবার উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মাসিক সভায়
অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নওরীন হক,উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুন্নী ইসলাম,বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মোঃ মনির হোসেন মিয়া,বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকতা ডাঃ নিরুপম সরকার সোহাগ বলেন,সুবাহ তার লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে একজন গর্বিত ডাক্তার হয়ে যেন দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারেন সেই প্রত্যাশা রাখছি।