ভোলা প্রকাশঃ
লেখক:অনিন্দ্য মন্ডলঃ
অনেকদিন পর গ্রামে আসল রবিন।এই গ্রামেই তার শৈশব কৈশোর কেটেছে।মাধ্যমিক শেষ করার পর উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার জন্য তার কাকা তাকে নিয়ে শহরে আসে।সেখানেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।সে এখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র।
সেই ছোটবেলায় যে সে গ্রাম ছেড়ে এসেছে আজ বহুদিন পর তার সেই চিরচেনা গ্রামে ফিরে এসেছে।কিন্তু গ্রামটার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
পাকা রাস্তা হয়েছে।গ্রামের মেঠোপথ এখন আর নেই বললেই চলে।
যাইহোক, রবিন যখন গ্রামে পৌঁছায় তখন সন্ধ্যা নেমেছে মাত্র।
সে কাছাকাছি একটা চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
তার গ্রামেরই ছেলে রনি তাকে দেখে চিনতে পারল।
রনি বলল:আরে রবিন ভাই না ?
রবিন বলল:হ্যা।তুমি তো রনি।তুমি তো আঁকাআকি করো।ফেসবুকে তোমার আঁকা ছবি দেখলাম।কেমন আছো তুমি ?
রনি বলল:এইতো ভাই ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন ?আজ বহুদিন পর আপনি গ্রামে আসলেন। ভাই আসেন চা খাই।
রবিন বলল:না ভাই আজ থাক।অন্য একদিন।
বাড়ি যেতে হবে।বাবাকে ফোন করে জানাইনি যে আমি এখানে আসবো।
রনি বলল:ও।তাহলে আমি আপনাকে এগিয়ে দেই।আপনি তো এর আগে গ্রামে আসেননি।
রবিন বলল:তাহলে তো ভালোই হয়।চলো।
রবিন রনির সাথে কথা বলতে বলতে বেশি কিছুটা দূরে চলে আসলো।
এমন সময় রনি থেমে গেল।
রনি বলল:ভাই এইখানে রাস্তা দুইদিকে বেঁকে গেছে।বামপাশ দিয়েও যাওয়া যায় আবার ডানপাশ দিয়েও যাওয়া যায়।আপনি ডানপাশ দিয়েই এগিয়ে যান।একটু দেরি হতে পারে গ্রামে পৌঁছাতে।কিন্তু বামপাশ দিয়ে না যাওয়াই ভালো।ওখানে কিছুদূর গেলেই কয়েকটা বাড়ি দেখবেন।ওদের সাহায্য নিয়েই গ্রামে যেতে পারবেন।পারবেন তো ?
রবিন বলল:হুম পারব বৈকি।
রনি বলল:আচ্ছা তাহলে তো হয়েই গেল।আমি একটু বাজারে যাই।আমার খুব দরকারি একটা কাজ আছে।আমি যেতাম আপনার সাথে।কিন্তু অনেক বড় ঝামেলায় পড়ছি।
রবিন বলল:আচ্ছা সমস্যা নেই।তুমি যাও।
রনি চলে যেতেই রবিন চিন্তায় পড়ে গেল।
যাইহোক,সে বামপাশ দিয়েই যাওয়া শুরু করলো।বেশ কিছুটা দূর যাওয়ার পর সে মোবাইলে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা সাতটা বাজে।অথচ এখনই রাতের মতো এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
আরো কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সে সামনে বাঁশঝাড় দেখতে পেল।কিছুটা দূরে একটা মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল সে।সে মেয়েটার কাছাকাছি আসতেই মেয়েটাকে সে চিনতে পারল।মেয়েটা মোহিনী।
মোহিনী তার ছোটবেলার বন্ধু।একসাথে স্কুলে পড়াশোনা করেছে।
রবিন তাকে ডাক দিল।
রবিন:মোহিনী……..আরে এই মোহিনী।কিরে শুনতে পাচ্ছিস না ?
বলতে বলতে সে মোহিনীর আরো কাছে চলে আসলো।কিন্তু মোহিনী যেন শুনতে পায়নি এমন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল।
রবিন আবারও ডাক দিল।
‘কিরে ?কখন থেকে তোকে ডেকে চলেছি আর তুই কোন পাত্তাই দিচ্ছিস না।
এবার যেন মোহিনী তার দিকে ফিরে তাকাল।
মোহিনী বলল,কিরে তুই ?এতো রাতে এখানে কি করিস ?
রবিন বলল:আমারও তো সেই একই প্রশ্ন এতো রাতে তুই এখানে কি করছিস ?
মোহিনী যেন একপ্রকার বিষয়টি উড়িয়ে দেবার ভঙ্গিতে বলল,ওসব কিছু না।
রবিন বলল:জানি,জানি সব জানি।এই তোর নতুন বয়ফ্রেন্ডটা কে রে ?
মোহিনী বিরক্ত হয়ে বলল,বললাম তো ওসব কিছু না।তুই এখানে এতো রাতে কেন,এসেছিস সেটা বল।
রবিন বলল,তুই এরকম করে কথা বলছিস কেন ?কি হয়েছে তোর ?
মোহিনী বলল,আরে আমি এখানে একটা ঝামেলায় ফেঁসে গেছি।তুই বল না এতো রাতে এখানে কেন এলি ?
রবিন বলল,আমি তো আমার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি।বাবা মাকে দেখা হয় না অনেকদিন।
মোহিনী বলল,তো এতো রাতে একা একা যাবি কিভাবে ?
রবিন বলল:তুই একটু পৌঁছে দিবি ?আমার না একটু ভয় ভয় করছে।
মোহিনী তার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠল।
বলল,তুই না পুরুষ মানুষ ?এতো ভয় কিসের ?
রবিন বলল:এতো কথা জানি না।তুই আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে পারবি কিনা বল৷
মোহিনী বলল:কত কি দেখতে হবে।আগে দেখতাম কোন মেয়েকে কোন ছেলে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে।এখন দেখছি এক ছেলেকে মেয়ে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে।
রবিন একটু বিরক্ত হয়ে বলল,তুই কি আমার সাথে যাবি ?
মোহিনী বলল,আচ্ছা চল চল।
এভাবে কথা বলতে বলতে সে যে বাঁশঝাড়ের একেবারে কখন কাছে চলে আসলো তা সে বুঝতেও পারল না।এরপর সে দেখল বাঁশঝাড়ের একটা মোটা বাঁশ কোন কারণ ছাড়াই নেতিয়ে আছে।
বিষয়টা তার কাছে বেশ অদ্ভুত লাগল।সে এই কথা বলার জন্য যখন সে পিছনে ফিরল।তখন সে দেখল ওখানে কেউ নেই।
বেশ অবাক হয়ে গেল সে।অবস্থা সুবিধার না বুঝে সে পড়ি কি মরি করে দৌড় দিল।কিন্তু তার পা যেন কয়েক মণ ভারি হয়ে গেল।কোনরকমে
ডানে বায়ে না তাকিয়ে জোরে দৌড় মারল সে।পিছন থেকে শুনতে পেল কে যেন বলে উঠল,
‘আজকে মতো বেঁচে গেলি তুই।’
এরপর সে একটা অট্টহাসি শুনতে পেল।এরপর আরো জোরে দৌড়াতে লাগল।
দৌড়াতে দৌড়াতে সে একটা বাড়ির সামনে চলে আসল।বাড়ির দরজায় সে জোরে জোরে ধাক্কা মারতে লাগল।দরজায় ধাক্কাধাক্কির শব্দ পেয়ে দরজা খুলল গৃহকর্তা।
‘কাকে চাই ‘ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললেন গৃহকর্তা।
‘আজকের রাতটা আমাকে এখানে থাকতে দেবেন ?
বড় বিপদে পড়েছি’কাঁপা কাঁপা গলায় বলল রবিন।
‘এসো ভেতরে ‘বলেই দরজা থেকে সরে গেলেন।ভিতরে ঢুকলো রবিন।
ঘরে ঢুকার পর লোকটা দরজা আটকে দিলেন।
‘এবার বলো আসলে তোমার সাথে কি হয়েছে ?’
রবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি।
এরপর রবিন তার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা খুলে বলল।
সব শুনে গৃহকর্তা বললেন,কি বললে মোহিনী ?মানে রমেন ডাক্তারের মেয়ে ?
রবিন মাথা নেড়ে সায় জানালো।
‘কিন্তু সে তো মাস খানেক আগেই গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ওই বাঁশঝাড়ে।’বিস্ময় জড়িত কন্ঠে বললেন গৃহকর্তা।
লোকটার কথা শুনে বেশ অনেকটাই অবাক হয়ে যায় রবিন।এইতো মাস তিনেক আগে মোহিনীর সাথে তার ফেসবুকে কথা হতো।তাহলে হঠাৎ করে কি হলো ?
গৃহকর্তা আরো জানালেন,মোহিনীর মৃত্যুর পর ওই বাঁশঝাড় এক প্রকার পরিত্যক্ত হয়ে যায়।রাতের বেলা দূরে থাক দিনের বেলাতেও কেউ ওখানে যেতে চায় না।
রবিন মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিল।তাকে এই আসন্ন বিপদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য।
সমাপ্ত-