সাইফুল ইসলাম আকাশ নিজস্ব প্রতিবেদক ভোলা।
ভোলা জেলা সিভিল সার্জন,ডাক্তার কে.এম শফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে ও প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধায়নে ভোলায় সদর হাসপাতালসহ ৬ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিন দিন চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে আধুনিকতার ছোয়া পাচ্ছে ভোলা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষ করে ভোলা সদর হাসপাতালে পূর্বের তুলনায় সেবার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, হাসপাতালের বর্হিবিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১২ শর মত রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। অন্তবিভাগে আরও ৪০০/৫০০ জনকে সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ খোলা থাকে।
সকাল থেকে ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা ৩০ পর্যন্ত আউটডোরে আগত রোগীদের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসারগণ চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন পাশাপাশি বিনামূল্যে সরকারি ঔষধ পাচ্ছেন রোগীরা। সরকারি ফি প্রদানের মাধ্যমে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে রোগীরা রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধরনের পরিক্ষা করে থাকেন।
এছাড়াও এক্স রে সহ গর্ভবতী মহিলাদের আলট্রাসোনোগ্রাফী ও ইসিজিসহ সকল ধরনের সেবা প্রদান করা হয়। যক্ষা রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবাসহ রয়েছে। এবং বিনা মূলে ঔষধ সরবরাহের ব্যবস্থাও রয়েছে। হাসপাতালটিতে ৩ টি এম্বুলেন্স রয়েছে যেটি ব্যবহার করে রোগীর স্বজনরা জরুরি প্রয়োজনে বিভাগীয় হাসপাতাল কিংবা রাজধানী শহরে রোগীদের নিয়ে যেতে পারেন।
শুধু ভোলা সদর হাসপাতালেই নয় ভোলায় গত ১৫ জুলাই ২১ সালে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক চমক দেখিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাক্তার কে.এম শফিকুজ্জামান। এর মধ্যে করোনা ভাইরাস, ডেঙ্গু প্রতিরোধে তিনি এলাকা পরিদর্শন করে নিজেই মানুষের পাশে দাড়িয়ে চিকিৎসা করেছেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ভোলার ৭ টি উপজেলার ২২১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক এর সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ সহ প্রতি সপ্তাহে ও মাসে নিয়মিত সভা,সেমিনার ও মনিটরিং কার্যক্রম চালু রেখেছেন যার ফলে গ্রাম থেকে শহরে সব জায়গাতেই স্বাস্থ্য সেবার মান এগিয়ে যাচ্ছে।
ভোলার সদর হাসপাতাল সহ ৬ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালাল চক্র নির্মূল,প্রাইভেট এম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ,ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ,হাসপাতাল ক্যাম্পাসে রোগী পরিবহন কারী অটোর অবস্থান নিয়ন্ত্রণে কাজষকরে যাচ্ছেন তিনি।এতে করে প্রতিটি হাসপাতালের পরিবেশ সুন্দর হচ্ছে,রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্য চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে এর ফলে পূর্বের মতো অসহায়-দুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা গুনতে হয় না।
ভোলা সদর হাসপাতালে এর পূর্বে অটো ,মটর সাইকেল সহ বিভিন্ন যানবাহন এ স্টেশন এর মতো ভীড় ছিল যার কারণে দালালের মাধ্যমে রোগীরা প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়া চলমান ছিল যেটি বর্তমানে বন্ধ
রয়েছে।
পুরো সদর হাসপাতাল বর্তমানে যানবাহন মুক্ত,রোগী নামিয়ে দিয়েই তাদেরকে নিদিষ্ট স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন সিভিল সার্জন। বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালে কাগজে কলমে ৬০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলে ও রয়েছে মাত্র ২৪ জন,এই ২৪ জন দিয়েই রোগীদের সেবা প্রদান করে হিমশিম খেতে হচ্ছে
দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের।
তবুও ঘাটতি নেই সেবার,জীবন বাজি রেখে সেবা করে যাচ্ছেন।গাইনি,সার্জারি,নাক-কান-গলা,অর্থোপেডিকস ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে রোগীর সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন সিভিল সার্জন।
এছাড়া ও জেলা-উপজেলার সকল সরকারি হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সহ ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিগনের সপ্তাহে ২ দিন ১ ঘন্টা ঔষধ বিষয়ক তথ্য প্রদানের জন্য বলা হয়েছে এর বাহিরে তাদের কে হাসপাতালে না আসার জন্য নির্দেশনা ও প্রদান করেছেন তিনি।
এদিকে সরজমিনে রবিবার গিয়ে দেখা যায়, শিশু-কিশোর, বয়োবৃদ্ধ মহিলা-পুরুষ রোগীরা সাড়িবদ্ধ ভাবে ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহন করছেন।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা দিঘলদী ইউনিয়নের শিউলি বেগম বলেন, আমি আমার মায়ের সমস্যার জন্য এখানে এসেছি, হাসপাতালের বর্হিবিভাগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিলাম। সেবার মান নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে আগের চেয়ে এখন সেবার মান মোটামুটি ভালো তবে প্রেসক্রিপসনের কিছু ঔষধ এখানে পাওয়া যায় বাকিগুলো বাহির থেকে কিনতে হয়।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার মুলাইপত্তন গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, আমি এখানে আমার চিকিৎসার জন্য মেডিসিন বিভাগের একজন ডাক্তারকে দেখিয়েছি। দুলাল মিয়ার মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আর্থিকভাবে অসচ্চল আমার এত টাকা নেই যে আমি ডাক্তার ফি দিয়ে বাইরে চিকিৎসা করাবো এখানে বিনা পয়সায় আমার চিকিৎসা করতে পেরে আমার
জন্য অনেক সুবিধা হইছে।
হাসপাতালে দায়িত্বরত একাধিক কর্মকতা বলেন,জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সিভিল সার্জন ডা.কে.এম শফিকুজ্জামান।
তারা বলেন এ জেলায় ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি সদর হাসপাতাল রয়েছে।স্বাস্থ্যসেবার এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মান উন্নত করার জন্য উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের (ইউএইচএফপিও) নিয়ে একটি সমন্বিত পরিদর্শন কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন সিভিল সার্জন মহোদয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা সদর
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বর্তমান সিভিল সার্জন স্যার খুবই মানবিক হৃদয়ের মানুষ এবং কো-অপরেটিভ, স্যারের নির্দেশনা মতে আমরা চিকিৎসক সংকট থাকা সত্ত্বেও রোগীদের কষ্ট দিচ্ছি না।রাত-দিন আমাদের ডাক্তার,নার্স রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন,সিভিল সার্জন স্যার রোগীদের চিকিৎসা সেবা সঠিক মতো হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আন্তরিক।
ভোলা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার কে.এম শফিকুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ইউএইচএফপিওদের নিয়ে প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইপিআই কার্যক্রম পরিদর্শন করছি। কোন উপজেলায় কোন কাজটি ভালো হচ্ছে, সেটি জেনে একটি উপজেলার ভালো দিকগুলো অন্য উপজেলায় বাস্তবায়ন করার জন্যই কাজ করছি। সম্প্রতি উপজেলায় বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম সুপারভিশন করেছি। এভাবে সবগুলো ক্লিনিকে করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি,স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত স্বাস্থ্য বিভাগের যোগাযোগ রয়েছে। কোন সেন্টারে কি কাজ হচ্ছে এবং ভুলত্রুটি কি আছে, সেগুলো নোট করছি। এগুলো কিভাবে সমাধনা করা যায়, তা মাসিক সভায় আলোচনা করা হয়। সবগুলো সংকট কাটিয়ে উঠতে স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। উপজেলা পরিষদকে আমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
লোকালে,কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভালো সেবা দিতে পারলে জেলা হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সদর হাসপাতালে রোগীর চাপ কমলে, ভালো সেবা দেওয়া সম্ভব। এজন্য উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করতে কাজ করছি। উপজেলায় যেসব চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়, শুধু সেগুলো জেলায় রেফার করা হবে।’
তিনি আরো বলেন,আমি যোগদান করার পর থেকেই চেষ্টা করেছি ভোলাবাসীর সেবক হিসেবে কাজ করার,ভোলার প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার মান বৃদ্ধির জন্য সর্বদা পরিদর্শন চলমান রয়েছে,দালাল নির্মূলে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছি যা এখন সদর হাসপাতেই শূন্যের কোঠায় অবস্থান করছে।তিনি বলেন,শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয় বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই সে গুলো বন্ধের নির্দেশনা প্রদান
করেছি। এর মধ্যেই বৈধ কাগজপত্র না থাকায় লালমোহনে ৫ টি,ভোলা সদরে ১ টি ও চরফ্যাশনে ১ টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে,তিনি বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতে
ডিগ্রিধারী এনেস্থেসিয়া ডাক্তার ব্যতীত কোন অপারেশন করা যাবে না।
এ বিষয়ে তিনি ইতিমধ্যেই একটি নির্দেশনা ও করণীয় জানিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতিকে চিঠি দিয়েছেন।
ভোলা সদর হাসপাতালে দালাল চক্র নির্মূল ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্বাভাবিক রাখার জন্য ২ জন পুলিশ সদস্য নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। এ জন্য তিনি ভোলা জেলা ডায়নামিক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহিদুজ্জামান বিপিএম কে ধন্যবাদ জানান।