সুজন হাওলাদার বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মেলা মেলা মেলা। তরমুজের বিশাল মেলা। বড় বড় তরমুজ নেন। এক পিস ৫০ টাকা। দুই পিস ১০০ টাকা মাত্র। মেলা মেলা মেলা…
ভোলার ভোলা সদর উপজেলা পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাতা গ্রামে ভ্যান গাড়িতে মাইকিং করে এভাবেই তরমুজের ক্রেতা আকৃষ্ট করছেন বিক্রেতা জামাল। প্রতি বছরই তিনি মৌসুমে তরমুজ ব্যবসা করেন। এর আগের বছর তরমুজের চাহিদা ছিল আকাশচুম্বী। কেজি দরেও বিক্রি করেছেন।
কিন্তু এই মৌসুমের চৈত্রে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে পঁচে যাচ্ছে তরমুজ। তাছাড়া বৃষ্টি হওয়ায় ক্রেতা চাহিদাও কমেছে। এজন্য মাইক নিয়ে গ্রামে নেমেছে তরমুজ বিক্রি করতে।
শনিবার (০৫ এপ্রিল) দুপুরে কথা হয় জামালের সাথে। তিনি জানান, ভোলার প্রায়সবগুলো তরমুজ ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। ভালোভাবে পাকার আগেই কাচাপাকা তরমুজ তুলতে হয়েছে চাষীদের। এমনকি অনেক ক্ষেতে তরমুজ পঁচেও গেছে। এজন্য মুনাফা তুলতে চাষীরা যে দামে পারছে তাতেই বিক্রি করছে।
জামাল বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরেও তরমুজের ক্রেতা পাচ্ছি না। মাঝারি সাইজের দুটি তরমুজ ১০০ টাকায়ও কিনতে চাইছে না মানুষ।
শুধু জামাল নয় ভোলা শহরের ব্যবসায়ী ইসমাইল, হারুন ও এনায়েত হোসেনও জানান একই কথা। এই তিন ব্যবসায়ী বলেন, কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় তরমুজের ব্যবসা একেবারে ধ্বস নেমেছে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় কেউ কিনতে চাইছে না। তাছাড়া ক্ষেতেও পানি জমে থাকায় চাষীরা বিপদে আছেন।
চরফ্যাশন উপজেলার চাষী ইছাহাক কাজী বলেন, ৩০০ শতাংশ জমিতে তরমুজ দিয়েছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে অধিকাংশ তরমুজে দাগ পড়ে গেছে। অনেকগুলো পঁচে যাচ্ছে। বিক্রির পাইকার পাচ্ছি না। এ বছরের তরমুজের ৩ লাখ টাকাই লোকসান।
ভোলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু হানিফ মোল্লা জানান, আমার ৫২ বছর বয়সে এ বছরই প্রথম দেখলাম তরমুজের মেলা।দেুই-তিনদিন ধরেই মাইকিং করে গ্রামে গ্রামে তরমুজ বিক্রি করতে দেখেছি। তিনি বলেন, দুই সাপ্তাহ আগে যে তরমুজ কিনেছি ১৫০ টাকায় এখন সেই সাইজের তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অদিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, যেকোন বছরের তুলনায় এবার ভোলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই মৌসুমে আমাদের লক্ষমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৪৯ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৩৮৩ হেক্টর জমি। বেশি আবাদে লাভবান হচ্ছে। তবে বৃষ্টিতে কিছুটা বিপাকে ফেলেছে কৃষকদের। আমরা চেষ্টা করছি চাষীদের সাহায্য করার।
হিসবে মতে, চলতি মৌসুমে ভোলা জেলায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৬ টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য হতে পারে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।