আশিকুর রহমান শান্ত, ভোলা প্রকাশ।।
ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী ও তার মেয়ের জামাই মনজুরুল ইসলাম লিটন ও তার ভুমিদস্যু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে একই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আফরোজা আক্তার (৩৮) নামের এক নারীর ২০ লক্ষ্য টাকা মুল্যের ৩২ শতাংশ জমি জোর করে দখলে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আফরোজা আক্তার উপজেলা ভূমি অফিসার ও উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবর একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ভুক্তভোগী আফরোজা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ৩২ শতাংশ জমি ক্রয় করি। যার ডিপি-১২২৪, দাগ নং-৩১৮৫, আগত খতিয়ান-৩৩৫৩/৩১৮৫ । এই জমিটি আমি এডভোকেট চিন্ময় দে ও হিরন দে থেকে ক্রয় করি। ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক আমি। জমিটি ক্রয় এরপর থেকে স্থানীয় কাচিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী ও তার মেয়ের জামাই ভূমিদস্য লিটনের কু’নজর পড়ে। তারা বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি ও মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে আমার এ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা রাতের আঁধারে আমার জমিতে একটি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে। পরে ঘর উত্তলনের বিষয়ে আমি থানায় জানাই। তারা সেই ঘরটি ব্যবহার করে বেশ কয়েকদিন ধরে মাদক ও জুয়ার আসর বসায়। তাই এই ঘরটি আমি ভেঙ্গে ফেলার জন্য শুক্রবার বোরহানউদ্দিন থানার ওসি কে জানাই। ওসি সাহেব কে বলে আমি ঘরটি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য যাই। সেখানে যাওয়ার পরপর চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজীর মেয়ে আমার জমির সাইনবোর্ড ভেঙ্গে ফেলতে যায়। শুধু তাই নয় সে আমাকে হাতুড়ি দিয়ে মারতে আসছে কয়েক বার। পরে আমি বোরহানউদ্দিন থানায় যাই। সেই সুযোগে চেয়ারম্যান নিজে আমার সাইনবোর্ড টি ভেঙ্গে নিয়ে যান।
ভুক্তভোগী নারী অভিযোগে করে আরো বলেন, আমি জমি দখলে বাধা দিতে গেলে চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী আমাকে বলেন, আমি এমপির লোক। আমি যা বলব সেটাই হবে। এই জমির অর্ধেক অর্থাৎ ১৬ শতাংশ আমার জামাইকে দিতে হবে। না হলে পুরো জমি থেকে তোমাকে উৎখাত করে দেওয়া হবে।
শুক্রবারের ঘটনার সময় ঘটনা স্থলে উপস্থিত থাকা কাজের শ্রমিক বলেন, আমরা কাজ করতেছি হঠাৎ করে চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজীর মেয়ে এসে সাইনবোর্ড টি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে ও আফরোজা আপাকে হাতুড়ি দিয়ে মারতে আসে। তখন তিনি থানায় যায়। এই ফাঁকে চেয়ারম্যান নিজে এসে সাইনবোর্ড ভেঙ্গে নিয়ে যায়।
শনিবার (৩০ জুলাই) ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা চরফ্যাশন মহাসড়কের পাশে কাচিয়া ৭ নং ওয়ার্ডে একবাটে ৩২ শতাংশ জমি। ঘটনা স্থলে জমির মালিক আফরোজা আক্তার এর শ্রমিকরা কাজ করছে। শ্রমিকরা ভয়-ভীতি নিয়ে ভয়ে ভয়ে বলেন, আমরা টাকার বিনিময়ে কাজ করি। তারপর ও সবসময় ভয়ে থাকি। চেয়ারম্যান যখন তখন তার লোকজন দিয়ে আমাদের উপর হামলা করতে পারে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী এলাকায় এমপি’র নাম ভাঙ্গিয়ে এ ধরনের অপরাধ ও অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান এর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার মেয়ের জামাই মনজুরুল ইসলাম লিটন সকলের সামনে ঘোষণা দিয়ে বলেন আমি চেয়ারম্যানের জামাই আমাকে কেউ কিছু করতে পারবেনা।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে চেয়ারম্যান হয়েছেন আব্দুর রব কাজী। তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তার মেয়ের জামাই লিটনএলাকার বাহিরের লোকজন জমি কিনলে সেখানে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি করে টাকা পয়সা আদায়ের চেষ্টা করেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাচিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রব কাজী বলেন, আমার জামাই ও এখানে জমি পাবে। ওই নারী জমি ক্রয় করেছে ওই নারীকে বলেছি, এখানে মোট ৩২ শতাংশ জমি আছে। ৩২ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ সে নিবে এবং আমার জামাইকে ১৬ শতাংশ দিবে। কিন্তু তিনি সেটি রাজি নয়। সাইনবোর্ড ভাঙার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সাইনবোর্ড ভাঙ্গার বিষয়ে কিছু জানিনা, তার মেয়ের সাইনবোর্ড ভাঙ্গার চেষ্টার ও হাতুড়ি দিয়ে মারতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। আমার অগোচরে এটা হলেও হতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান এর মেয়ের জামাই মনজুরুল ইসলাম লিটন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা এমপি সাহেব কে জানিয়েছি। এমপি সাহেব বলেছেন ওনার নাম ঠিকানা নিয়ে ওনাকে দিতে। উনি খুলনার এমপি কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন এই মহিলা খুলনা থেকে এখানে এসে এরকম কেন করছে। এই জমিটি আফরোজা আক্তার এর ক্রয়কৃত সম্পত্তি তিনি তার বলে কেন দাবি করছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহিলাকে আমি বারবার নিষেধ করেছি এই জমিটি কিনতে। তাকে আমি এইও বলেছি এখানে অনেকেই আছে জমিটি কেনার মত আপনি খুলনা থেকে এখানে এসে জমিটি কিনে আমার সাথে ঝামেলা করিয়েন না। আপনি আমার সাথে লড়ার চেষ্টা করিয়েন না, অনেক মানুষের মোকাবেলায় এ কথা আমি তাকে বলেছি। সে বলে সে জমি কিনছে, আমি বলেছি আপনি একবার না হাজার বার কিনলে ও তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার অফিসার্স ইনচার্জ মনির হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে জমি নিয়ে বিরোধ চলমান রয়েছে। আদালত থেকে বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে আসলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব।