মোঃ সাইফুল ইসলাম আকাশ নিজস্ব প্রতিবেদক,ভোলা
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২০৩১তম হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বোরহানউদ্দিনের নৌ পুলিশের ওসি মোঃ শরিফুল ইসলামের কনিষ্ঠ কন্যা রাইসা তাসনিম।
এক ঘণ্টা সময়ের ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় রাইসা পেয়েছেন ৭০.৫,তার মেরিট স্কোর ২৭০.৫।
তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল খুলনা মেডিকেল কলেজ।
জানা গেছে,রাইসা তাসনিম একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান।
পুলিশ বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি।ছোটবেলা থেকে রাইসার মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে তার বাবা পুলিশ কর্মকতা শরিফুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।রাইসা তাসনিম ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী,সাহসী আর পরিশ্রমী।
রাইসার বাবা মো.শরিফুল ইসলাম পেশায় একজন পুলিশ কর্মকতা
ও মা জেসমিন আরা একজন
গৃহিনী। শরিফুল ও জেসমিন আরার ২ মেয়ে এর মধ্যে বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সম্মান ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত।
আর রাইসা বর্তমানে মেডিকেল কলেজে ভর্তি উত্তীর্ণ হয়েছেন।
রাইহা ২০১৪ সালে ঢাকা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন,২০২০ সালে যশোর পুলিশ লাইন্স মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন এবং ২০২২ সালে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ও জিপিএ-৫ পান তিনি।
এ ছাড়া রাইসা শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন।
রাইসার পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায়।
এদিকে বোরহানউদ্দিনের নৌ পুলিশের ওসি শরিফুল ইসলামের কনিষ্ঠ কন্যা রাইসা সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ায় শিক্ষার্থী রাইসার পরিবার,বোরহানউদ্দিন উপজেলা,তার নিজ গ্রামসহ উপজেলায় বইছে আনন্দের বন্যা।
রাইসা তাসনিম সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বাবার মতো মানুষের সেবা করার বাবা পুলিশের চাকরি করে মানুষের সেবা করছেন আমি ও চাই ডাক্তার হয়ে অসহায় ও দুস্থ মানুষের ফ্রি ট্রিটমেন্ট করে সেবা করতে।আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ বোরহানউদ্দিন উপজেলার দরিদ্র-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি আরও বলেন,আমার বাবা যেভাবে মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন আমি ও আমার বাবার মতো মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।
তিনি বলেন,আমার এই সাফল্য ও ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা সহ শিক্ষকদের অবদান অপরিসীম।
মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদেই ফেলেন রাইসার মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,আমাদের কনিষ্ঠ মেয়ে রাইসার সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে।আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি।
রাইসার বাবা পুলিশ কর্মকতা শরিফুল ইসলাম বলেন,ছোটবেলা থেকেই রাইসা লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী।অবশেষে আমাদের পরিবারের সবার প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি তার নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।
আমি একজন সরকারের কর্মচারী হওয়ার পর থেকেই সাধারণ অসহায়-দুস্থ মানুষের সেবা বিনা পয়সাই করে যাচ্ছি,মানুষের সেবায় সবসময়ই নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পছন্দ করি।
আমার মেয়ে রাইসাকে ছোট বেলা থেকেই চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত রাখার স্বপ্ন দেখেছি সকলের দেওয়ায় আজ আমার স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত হয়েছে,তার কনিষ্ঠ কন্যা রাইসার জন্য সকলের কাছে দোয়া ও চান তিনি।
এদিকে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় রাইসাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাইসার আংকেল ঠাকুরগাওয়ের জেলা প্রশাসক মোঃ মাহাবুবুর রহমান,তার
খালাম্মা নড়াইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম ও তার স্বামী নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফখরুল হাসান।
রাইসার ছোট খালা নড়াইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম বলেন,রাইসা ছোট বেলা থেকেই অনেক মেধাবী।ঢাকা আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে থাকাকালীন সময়ে রাইসা মেধা তালিকায় শ্রেষ্ঠ হয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের হাত থেকে পুরস্কার লাভ করেছেন।
তিনি বলেন,রাইসা তার লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে একজন গর্বিত ডাক্তার হয়ে যেন দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারেন সেই প্রত্যাশা রাখছি।