আশিকুর রহমান শান্ত ভোলা প্রতিনিধঃ
মাছ ধরতে গিয়ে গত ৬দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর রবিবার (২ জুন) ভোরে সন্ধান মিলেছে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ফিসিং বোট সহ ১৬ জেলের । রবিবার দুপুরে তাদের পরিবার সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ৷ তাদের সবাই জীবিত রয়েছেন ৷
গত ২৬ জুন সোমবার রহমান বদ্দার ও আবুল বদ্দার নামক দুই সহোদর ভাই ইঞ্জিন চালিত ৩টি বোট নিয়ে গভীর বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে যায়। পরদিন ২৭ জুন মঙ্গলবার ভোর ৪ টায় প্রচন্ড ঝড়ের কবলে পড়েন। ওই সময় আবুল বদ্দার ও মাঝিমাল্লারা ২টি বোটসহ ফিরে আসতে পাড়লে ও নিখোঁজ হন রহমান বদ্দার সহ ১৬ জেলে ৷ নিখোঁদের পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদে ভাড়ী হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস ৷ শোকাবহ পরিবার গুলোতে ঈদ আনন্দের পরিবর্তে বইছিলো শোকের মাতম। তাদের সন্ধানে স্বস্তি ফিরে এসেছে পরিবার গুলোর মধ্যে ৷
গংগাপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও মৎস্য আড়ৎদার কালাম বদ্দার এবং নিখোঁজ রহমান বদ্দার এর বৃদ্ধ বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, ২৬ জুন তার ছেলে ১৬ জন মাঝি মাল্লা নিয়ে চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। অপর জেলে আবুল বদ্দার একই উপজেলার সামরাজ ঘাট থেকে ২টি ট্রলার নিয়ে সাগরে যায়। পরদিন ২৭ জুন সাগরে প্রচন্ড উঠে। আবুল বদ্দার তার মাঝি মাল্লা নিয়ে উপরে আসতে সক্ষম হয় তবে রহমান সহ ১৬ জেলে ৬ দিনেও ফিরে আসেনি । পরিবারের ধারণা ছিল ঝড়ের কবলে পড়ে তারা দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন ৷ তবে রবিবার ভোরে তাদের ফোনে কল দিয়ে সবাই জীবিত আছেন বলে জানান জেলেরা ৷
তাদের পরিবারকে মোবাইলে জানান, প্রবল ঝড়ে গভীর সমুদ্রে তাদের প্রধান ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় ৷ পরে বোটে থাকা অন্য ছোট ইঞ্জিন দিয়ে তারা কূলে আসার চেষ্টা করেছেন ৷ গভীর সাগরে থাকায় তাদের মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক ছিলনা ৷ তাই তাদের কেউই পরিবারের যাথে যোগাযোগ করতে পারেনি ৷ রবিবার ভোরে কূলের কাছাকাছি আসলে ফোনে নেটওয়ার্ক আসে এবং বাড়ীতে কল দিয়ে পরিবারকে জানান ৷ তাদের এমন খবরে স্বস্তি ফিরে এসেছে সবার মাঝে ৷ তারা রাতের মধ্যে পরিবারের কাছে ফিরবে বলেও জানান ৷
নিখোঁজ জেলেরা ছিলেন, গংগাপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দেলোয়ার বদ্দারের ছেলে ও বোট মালিক রহমান বদ্দার ,৯নং ওয়ার্ডের নুরুল হক মিস্ত্রির ছেলে মাঝি আব্বাস, তাঁর খালু চুন্নু, মামা হাসান, সিদ্দিক তালুকদারের ছেলে নেছার, ৮নং ওয়ার্ডের ইউছুব মাতাব্বর এর ছেলে আকতার, ইয়াকুব মাঝির ছেলে আলামিন, রহিম এর ছেলে ইলিয়াস, রহিম হাওলাদারর ছেলে নজু, শাহাজান এর ছেলে কবির, তাজল মাতাব্বরের ছেলে মুন্না, ইসলাম ডাক্তারের ছেলে কুট্টি, সাদেক এর ছেলে ইসমাইল, হাবু, ইলিয়াস, আজগর আলী৷ এদের মধ্যে আজগর আলী কাচিয়া ইউনিয়নের হলেও অন্যরা গংগাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
এদিকে আবুল বদ্দার ২টি ট্রলার নিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে হারানোদের খুঁজতে সাগরে যাত্রা শুরু করছেন ৷
নিখোঁজ রহমান বদ্দার, আকতার, সাকিল ও ইউছুবের পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে চোখের ঘুম চলে যায় ৷ সবাই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছেন ৷ তাদের ফিরে আসার খবরে এখন তারা খুশি ৷
সামুদ্রিক মৎস্য কর্মকর্তা মো মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আজকে জানতে পারছি। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। বোরহানউদ্দিন উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ( অতিরিক্ত দায়িত্ব) জামাল হোসেন জানান, এ সম্পকিত কোন তথ্য আমার জানা নেই।
গংগাপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান মো: রেজাউল করিম বলেন, বিষয়টি খুবই হৃদয়বিদারক ছিল। ৭ দিন নিখোঁজ থাকার পরে তাদের সন্ধান মেলায় সবাই খুশি ৷
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নওরীন হক বলেন, নিখোঁজদের সন্ধান পাওয়া গেছে রবিবার রাতের মধ্যে তারা তাদের পরিবারের কাছে আসবে বলে আশা করছি ৷
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কে এম শফিউল কিঞ্জল বলেন, এ বিষয়ে কেউ রিপোর্ট কিংবা অভিযোগ দেয়নি। তাই আমাদের কাছে কোন তথ্যও নেই।