ভোলা প্রতিনিধি, ভোলা প্রকাশ।।
ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত ৩১৪ বস্তা চাল পাচার করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের প্রশাসক রাকিবুল হাসান ও কয়েকজন সদস্যের যোগসাজশে এ চাল পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন চাল না পাওয়া বিক্ষুব্ধ জেলে পরিবারের সদস্যরা। তারা প্রশাসকসহ এর সাথে জড়িতদের বিচারের দাবিতে শনিবার (২৯ মার্চ) পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় প্রশাসককে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশের সহযোগিতার চাল দেওয়ার আশ্বাসে সেখান থেকে ছাড়া পান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,গত শুক্রবার ও শনিবার (২৮ মার্চ ও ২৯ মার্চ) ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করা হয়। তবে শনিবার জেলেদের চাল বিতরণের সময় প্রায় ২৫০জন জেলেদের চাল সট পরে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দাড়িয়ে থেকে চাল না পেয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। পরে তারা ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রাকিবুল হাসানের কাছে চাল সট হওয়ার কারন জানতে চাইলে সে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এসময় তারা বাইরে এসে প্রশাসক ও এর সঙ্গে জড়িত ইউপি সদস্যদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
চাল নিতে আসা ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহ নেওয়াজ মনির ও চাল না পাওয়া জেলেরা জানান, ওই ইউনিয়নের মামুন ও সেলিম মেম্বার ইউনিয়নের প্রশাসকের যোগসাজসে ইউনিয়নের ০৯ নম্বর ওয়াডের ১৫৭ জন নিবন্ধিত জেলের বরাদ্দকৃত ৩১৪বস্তা চাল চুরি করে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে জেলেরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা রাকিবুল হাসানকে জিজ্ঞেস করলেও সে কোনো উত্তর দিতে পারেনি। তার মানে সেও এই চাল চুরির সঙ্গে জড়িত। আজকে দুই চারজন অসাধু লোকের কারনে শত শত জেলে চাল না পেয়ে ঈদ করতে পারছেন না। তাই দ্রুত চাল চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়াসহ চাল বঞ্চিত জেলেদেরকে চাল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান জেলেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রাকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে এর আগেও শিক্ষকদের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রভাব দেখিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন।
বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগের অনলাইন এমপিও ফাইল টাকা ছাড়া সেন্ড করেন না। তিনি শিক্ষকদেরকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে ঘুষ দাবি করেন। উপজোলা পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষকদের প্রশিক্ষনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি খাতের বিভি বরাদ্দ আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগ এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার এতো দুর্নীতির পরও তাকে একটি ইউনিয়নের প্রশাসক বানানোর কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
এ বিষয় সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের প্রশাসক মো. রাকিবুল হাসান তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দুই দিন ধরে জেলেদের বরাদ্দকৃত চাল দিয়েছি। তবে হিসেব অনুযায়ী ৬টন চাল গরমিল রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী ৩ দিনের ভিতর তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, চাল চুরির সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।