শ্রী বিজয় বাইন ভোলা।
ভোলার দৌলতখানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৩ শতাধিক বছরের পুরনো সৃষ্টিতলায় স্বপ্নে দেখা রহস্যঘেরা দেবীর বুড়ি মায়ের পুজা। সেখানে দিনভর ছিলো পূণ্যার্থীদের ঢল।মনের বাসনা পূরন করতে 'স্বপ্নে দেখা দেবীর পুজা, এবং প্রার্থনা করতে দুর দুরান্ত থেকে ছুটে আসা পুণ্যর্থীরা ভীড় জমান।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত দেবীর আরোধনা করতে দেখা গেছে পুন্যার্থীদের।ধুপকাঠি ও মোমবাতি প্রজ্জলন করে প্রার্থনা করেন আগত ভক্তরা।
জানা গেছে, প্রতি বছরের মত এ বছরও ভোলার দৌলতখানের চরপাতা ইউনিয়নের সৃষ্টিতলা নামক স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রাচীতম স্বপ্নে দেখা দেবী বা বুড়ি মায়ের উৎসব।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে সেখানে বসছে ঐতিহ্যবাহি গ্রামীন মেলা। সেখানে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। মন্দিরের পাশেই বিভিন্ন ধরনের দোকান দোকান ছাড়াও বসছে কুটির ও মৃৎ শিল্পের বাহারি দোকান।
স্থানীয়রা জানালেনন, মাঘ মাসের পঞ্চমি তিথীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বরসতি পূজা। একই সাথে অনুষ্ঠিত হচ্ছে স্বপ্নে দেখা দেবী বা বুড়ি মায়ের পুজা। শ্রশ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির, শ্মশান কালী মাতার মন্দির, বুড়ি মায়ের মন্দির ও সরস্বতী মন্দির প্রাঙ্গনে প্রচীনতম এ উৎসব উদযাপিত হয়। যা নানা আয়োজনে চলে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে আগত দর্শনার্থীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে।
পুণ্যার্থী পুজা কর্মকার, সুরভী ও বিজয় বাইন বলেন, শুনেছি এখানে এলে মনের বাসনা নাকি পূর্ণ হয় হয়,তাই মনের বাসনা পূরনে প্রার্থনা করেছি।
এদিকে হাজারো ভক্তদের সমাগম ঘটে স্বপ্নে দেখা দেবী বা বুড়ি মায়ের পুজায় । বুড়ি মায়ের পুজা উৎসবে কেউ আসেন রোগমুক্তির প্রার্থনা নিয়ে,কেউ বা আসেন পারিবার, স্বজনে উন্নতি মঙ্গল কামনায়।বুড়ি মায়ের সৃষ্টি গাছকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বুড়ি মায়ের মন্দিরসহ কয়েকটি মন্দির।
কয়েকজন পুণ্যার্থী বলেন, সৃষ্টিতলার নাম শুনেছি কিন্তু কখনো আসা হয়নি, এবারই প্রথম এসেছি, এসে খুবই ভালো লাগল।
সরেজমিন ঘিয়ে দেখা গেছে, বুড়ি মায়ের পুজোর দিন শ্রী শ্রী সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি দেয়া হয়, এক পাশে বসে গ্রামীণ মেলা অন্যপাশে নাম- কির্ত্তন অনুষ্ঠান।
সৃষ্টিতলার ইতিহাস সম্পর্কে জানা গেল, ৩'শ বছর আগে ওই এলাকার যোগেন্দ্র সিং বাড়ীর পূর্ব পুরুষ স্বপ্নে দেখেন বুড়ি মা এই বৃক্ষের নিচে অবস্থান করছেন । তিনি স্বপ্নে দেখিয়েছিলেন, কেউ যদি মনের বাসনা নিয়ে এই বৃক্ষের নিচে এসে প্রার্থনা করেন তাহলে তার সেই মনের বাসনা পুরন হবে। স্বপ্নে দেখা পর সিং বাড়ির সেই পুরুষ এখানে একটি সৃষ্টি গাছ রোপন করেন। সেই থেকে হাজার হাজার পুন্যার্থী বছরের এই দিনটি এলেই মনের বাসনা পূরন করতে আরোধনা করেন এবং পুজায় অংশগ্রহন করেন।
বিশাল এড়িয়া নিয়ে অবস্থিত এই সৃষ্টিতলা মন্দির জেলার বাইরেও বেশ পরিচিত। গাছটি এখনও ঐতিহ্যবহন করে আছে।
এদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে পুন্যার্থীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মন্দির কমিটির সভাপতি দিলিপ চন্দ্র বলেন, ৩'শ বছরের ঐতিহ্যকে ধারন করতে প্রতি বছরই এমন আয়োজন হয়ে থাকে। এ বছরও তার বাযতিক্রম হয়নি, এবারের আয়োজনে কয়েক হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে।