মোঃ মহিউদ্দিন
------
ভোলা জেলা বাংলাদেশের
একটি বৃহত্তম দ্বীপ,
এ জেলা আকৃতিতে
গাঙ্গেয় একটি বদ্বীপ।
এ জনপদের জনগণের
ব্যতিক্রমী হাবভাব,
এখানকার সংস্কৃতিতে
রয়েছে মিশ্র প্রভাব।
অতিথিদের খুবই আপ্যায়ন
করা এদের স্বভাব।
চাকচিক্য দেখে বুঝা বড় দায়
ভিতরে অভাব।
সেই জমিদারি প্রথা
বিলুপ্ত হয়েছে কবে,
ভোলা জেলায় এখনো
কিছু জমিদারবাড়ি
দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে।
কোন এক সময় জনসাধারণ
আতঙ্কিত থাকত এদের প্রভাবে।
এই জেলার দৌলতখান এ বাস করতেন
জমিদার কালা রায়,
তার ছোট ভাইয়েও খুব অত্যাচারী ছিল
তার নাম হীরা রায়।
এই দুই ভাই ভয়ঙ্কর অত্যাচারী ছিল
সবাই করতো ভয়।
এ জেলার ইতিহাস খুবই চমৎকার ,
ঘুইংগার হাটের মিষ্টি খেতে
এখনো মজাদার ।
এ জেলার মানুষ খুবই অতিথি পরায়ণ,
রংবে রঙ্গের পিঠা বানায়
পালন করে পৌষ- পার্বণ।
শীতের সময় খেজুর রসের
ফিরন্নি -পায়েস,
হাঁসের মাংসের সাথে রুটি
খেতে ভালোবাসেন।
এখানে আছে হযরত উজির চান
করনীর মাজার।
ভোলা সদরে আছে
দুদুমিয়ার দরবার।
এ জেলায় জন্ম হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের
সাধু সন্ন্যাসী অনিল বাবাজীর।
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
এই জেলাতেই জন্ম নেন,
ব্রিটিশ বিরোধী নলিনী দাস
এ জেলাতেই আন্দোলন গড়ে তোলেন।
বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি যাদুঘর।
চরফ্যাশন খামার বাড়ি নজরুল নগর।
নিজাম হাসিনা মসজিদ
দেখতে মিশরীয় পিরামিড এর মত,
দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ টাওয়ার
ভোলাতেই অবস্থিত।
১২ তম ভোলা পলিটেকনিকেল
ইনস্টিউট ভোলায় স্থাপিত।
যদি স্বচক্ষে দেখতে চান সোনালী প্রভাত,
তাহলে যাবেন ভোলার
দক্ষিণে তারুয়া সমুদ্র সৈকত।
২২৫ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ
স্থাপন করা হয়েছে ভোলায়,
জাতীয় গ্রিডের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
এখান থেকেই সরবরাহ করা হয়।
একসময় ভোলার খাল দিয়ে
লবণ পানি আসতো,
তখন এখানে লবণ তৈরি হতো।
ভোলা একটি প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ
জেলা হিসেবে পরিচিত,
মহিষের দুধ, টক দধি, ইলিশ,
পান, সুপারি, ধান, তরমুজ,
চিনাবাদামের জন্য বিখ্যাত।
ভোলা জেলার দক্ষিণে
বহু পর্যটন কেন্দ্র হয়েছে,
এখানের নৈসর্গিক বন বাদাড়ে
বহু বন্য প্রাণী হরেক রকম পাখি
নানান জাতের হরিণ রয়েছে ।
পলি ও নদীতে বয়ে আসা বর্জ্য
জমে এ দ্বীপটির জন্ম হয়,
এ দ্বীপের আয়তন ৩৪০৩.৪৮
বর্গ কিলোমিটার প্রায়।
৪৩৯ টি গ্রাম সংখ্যায়।
৫৭৩৯ টি মসজিদ ও ১০৩ টি মন্দির প্রায়।
লোক সংখ্যা প্রায় ২০,৩৭,২০১জন,
জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ
কিলোমিটারে প্রায় ৫০০ জন।
পুরুষ ৫১.১৭% মহিলা ৪৮.৮৩%।
ভোলা জেলার চরাঞ্চলে প্রায় সময়
হানা দেয় ঝড় - তুফান,বন্যার জলে,
আবার অনেকেই নিঃস্ব
নদী ভাঙ্গনের কবলে।
তারপরও এই দ্বীপটিকে
লোকজন দ্বীপের রানী বলে।
১২৩৫ সালে বঙ্গোপসাগরের মাঝে
একটি বিশাল চর এর উত্থান হয়,
১৩০০ সালের দিকে লোক বসতি
গড়ে উঠেছিল তথায়।
মৎস্য শিকারেই ব্যস্ত ছিল
তারা জীবন-জীবিকায়।
১৩০০ সালে কৃষি কাজ শুরু করে,
মৎস্য শিকার ও কৃষি কাজ উভয়
নিয়েই তারা জীবন গড়ে।
১৫০০ সালের দিকে মগ
ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের,
কু নজর পড়ে এ দ্বীপের উপর।
তারা এ দ্বীপটিকে ঘাঁটি বানিয়ে
চতুর্দিকে লুটপাট করত,
এ জনপদের মানুষদের ভয়-ভীতি,ত্রাস
সৃষ্টি করে রাখত।
১৫১৭ সালে জন ডি সিলভেরা
নামক জৈনিক জলদস্যু
এই দ্বীপটি দখল করে,
সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করে।
তখন এই দ্বীপটিকে মগের মুল্লুক বলতো।
ভোলা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা ছিল
পর্তুগীজ ও মগ দস্যুদের দখলে,
ভোলার জনগণ এই অত্যাচারীদেরকে
ধ্বংস করে দেয় সমূলে।
দ্বীপটি সম্পূর্ণ ত্রাস মুক্ত হয়ে
আসে জনসাধারণের দখলে ।
১৮২২সাল পর্যন্ত শাহবাজপুর
ছিল বাকেরগঞ্জের অংশেয়,
এ জেলার জনগণ বাকলা,ভুলুয়া,চন্দ্রদ্বীপ, হাতিয়া,
সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, বিক্রমপুরের বংশীয়।
১৮৫৪ সালে দ্বীপটি মহকুমা উন্নীত হয়,
১৮৬৯ সালে সাবডিভিশন হিসেবে
বরিশাল জেলার অধীনে হয় যুক্ত ,
বর্তমানে ভোলা জেলা বরিশাল
বিভাগের অন্তর্ভুক্ত।
১৮৭৬ সালে প্রশাসনিক কেন্দ্র
স্থানান্তরিত হয় ভোলায়।
১৯৮৪ সালে মহাকুমা থেকে জেলায় মর্যাদাপায়।
ভোলার উপজেলা সব ব্যক্তির
নামে নামকরণ করা হয়,
এখনো তাদের নাম ধরে
উপজেলার নাম ডাকা হয়।
ভোলা,দৌলতখান, তজুমুদ্দিন, বোরহানউদ্দিন,লালমোহন।
পূর্বে জেলা ছিল নোয়াখালীর অধীনে,
তখন জেলার প্রশাসনিক
কেন্দ্র ছিল দৌলতখানে।
পূর্ব, পশ্চিম,উত্তরে মেঘনা -তেতুলিয়া,
দক্ষিনে বিভক্ত হয়েছে বঙ্গবসাগর দিয়া।
ভোলা জেলায় ৭টি উপজেলা
৬৮ টি ইউনিয়ন রয়েছে।
ভোলা গাজীর নামানুসারে
" ভোলা" নামকরণ হয়েছে।
মতান্তরে ভোলানাথ দে এর
নামে যদি "ভোলা "নাম হয়,
তাহলে কালিনাথ বাজার হল
তার ভাইয়ের নামে কালিনাথ রায়।
ভোলার আদি নাম ছিল দক্ষিণ শাহবাজপুর,
তিন দিকে নদী দিয়ে ঘেরা
দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।
ভোলার কিংবদন্তি মসজিদ,মন্দির, স্থাপত্য
যে সকল ঐতিহাসিক
নিদর্শন রয়েছে,
তা থেকে অনুমিত হয়
ভোলা জেলার বয়স
সাত থেকে আট শত বছর হয়েছে।
মহারাজা কন্দর্প নারায়ণের কন্যা
বিদ্যা সুন্দরী ও কমলা রানীর
দীঘির ইতিহাস,
এ অঞ্চলে লোকসংস্কৃতির
একটি অংশবিশেষ।
মেঘনা-তেতুলিয়ায় বিধৌত বঙ্গোপসাগরের
উপকূলে ৯০ মাইল দৈর্ঘ্য- ২৫ প্রস্থ সমতলভূমি,
নদনদী,খাল, বিল
আছে ফসলি জমি।