চিকিৎসকের অবহেলায় দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ
চরফ্যাশন(ভোলা) প্রতিনিধি॥
ভোলার চরফ্যাশনের প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের অবহেলায় দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই শিশুর অবস্থার অবনতি হলে ওই ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন ও গাইনি চিকিৎসক ডাঃ ফারজানা তাসনীন গুরুতর অবস্থায় দুই শিশুকে গতকাল বুধবার সকালে ও দুপুরে চরফ্যাশন সরকারী হাসপাতালে পাঠালে নেয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
জানাযায়,বুবধার সকালে জ্বর নিয়ে মুসরাদ নামের ১০ মাস বয়সী শিশুকে চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের দালাল চক্র শিশুর স্বজনদের ভালো চিকিৎসার আস্বাসে ফুসলিয়ে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। এবং চিকিৎসার নামে নানান পরিক্ষা নিরিক্ষা দেন। এসব পরিক্ষা নিরিক্ষায় দির্ঘ সময় ক্ষেপন হলে শিশুর অবস্থার অবনতি হয়। এতে শিশুটির অবস্থা সংকাটপন্ন হলে তড়িগড়ি করে ওই প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুটিকে চরফ্যাশন সরকারী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সরকারী হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত শিশু দুলারহাট থানার আহাম্মপুর ইউনিয়নের মোশারেফ হোসেনের মেয়ে।
অপরদিকে মঙ্গলবার বিকালে মর্জিনা নামের এক প্রসুতিকে প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে নিয়ে এলে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে পুত্র সন্তান প্রসব হয়। রাত পেরিয়ে সকাল হলে ওই নবজাতকে কোন রকম পরিক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই প্রসুতি মায়ের সাথে রাখেন। বুধবার নবজাতক শিশুটির অবস্থার অবনতি দেখা দিলে কোন রকম চিকিৎসা ছাড়াই শিশুটিকে চরফ্যাশন সরকারী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক নবজাতক শিশুটিকে মৃত বলে জানান। নিহত নবজাতক শিশু দক্ষিণ আইচা থানার করিম পাড়া গ্রামের সেলিমের পুত্র।
নিহত শিশুর বাবা মোশারেফ হোসেনে জানান, তার শিশু পুত্রকে ডাক্তার দেখাতে চরফ্যাশন হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের দালাল চক্র তার ১০ মাস বয়সী শিশু কন্যাকে ভালো চিকিৎসা দেয়ার আস্বাসে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরিক্ষা নিরিক্ষার নামে সংকটাপন্ন শিশুকে কোন রকম চিকিৎসা ছাড়াই ক্লিনিকে বসিয়ে রাখেন। তীব্র জ্বরে শিশু কন্যা যখন সংকটাপন্ন হয়ে যায় ওই সময় শিশুর অবস্থার অবনিত দেখে তাকে সরকারী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেখানে নেয়ার পথে তার শিশু কন্যার মৃত্যু হয়।
প্রসুতির বোন লাইজু বেগম অভিযোগ করেন, তার বড় বোন মর্জিনার প্রসব বেদনা শুরু হলে সন্তান প্রসবের জন্য চরফ্যাশনে নিয়ে আসেন। এসময় ভালো চিকিৎসার নামে প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের দালাল চক্র তাদেরকে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে সিজারের মাধ্যমে তার বোনের একটি পুত্র সন্তানের জম্ম হয়। কিন্তু নবজাতক জম্মের পর থেকেই তার অবস্থা তেমন ভালো না হওয়ায় ওই ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের একাধিকবার বলা হয়। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বুধবার দুপুরে নবজাতক শিশুটির অবস্থা বেহাল দেখে তড়িগড়ি করে ওই ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার বোনের নবজাতক শিশুটিকে চরফ্যাশন সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। হসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত বলে জানান।
প্রাইভেট ক্লিনিক ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে কর্তব্যরত চিকিসক ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই শিশু মোসরাদকে নিয়ে এলে তিনটি পরিক্ষা দেই। পরিক্ষার রির্পোট পাওয়ার আগেই তার অবস্থার অবনতি দেখে তাকে উন্নত চিকিসার জন্য সরকারী হাসপাতালে পাঠনো হয়েছে।
গাইনি চিকিৎসক ডাঃ ফারজানা তাসনীন জানান, জম্মের পর নবজাতক শিশুর সম্পূর্ন সুস্থ্য ছিলেন। অবহেলার বিষয় সঠিক নয়। শিশুটি জম্মের পরপরই নিমোনিয়ার লক্ষণ ছিলো। বুধবার সকালে শিশুকে চিকিৎসার জন্য সরকারী হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুনেছি সেখানে নবজাতক শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
ক্লিনিক মালিক পলি ইসলাম অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ১০ মাস বয়সী শিশুটিকে ক্লিনিকে নিয়ে এলে চিকিসক রোগের ধরন অনুযায়ী তিনি পরিক্ষা দেন। কিন্তু শিশুটির অবস্থার অবনতি দেখে তাকে দ্রুত সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেখানে তার কি হয়েছে জানা নাই।
অপর নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রসুতি নারী মর্জিনার অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়েছে। শিশুর পরিবারকে নবজাতক শিশুকে একজন শিশু বিষেজ্ঞ দেখাতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা তা করেননি। তাছাড়া প্রসুতি নারীর আমাদের ক্লিনিকে অস্ত্রপাচার হয়েছে। তার ভালো মন্দের দ্বায়িত্ব আমাদের কিন্ত নবজাতকের নয়। নবজাতকের পরিবার থেকে জানতে পেরেছি ওই প্রসুতি নারীর আরো দুই শিশু পুত্রের জম্মের পরপরই মৃত্যু হয়েছে।
চরফ্যাশন সরকারী হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক রেবেকা নাজনীন জানান, নিহত দুই শিশুরই হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে মৃত্যু হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ শোভন বসাক জানান, ঘটনাটি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।